আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
মানুষের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রয়োজনের মধ্যে ‘যোগাযোগ’ হচ্ছে অন্যতম অপরিহার্য বিষয়। আর তাঁর মধ্যে বর্তমান সময়ে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইন্টারনেট। বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের অবস্থা প্রায় অচল। সামনে তা আরো উত্তপ্ত হবে এবং দিন দিন আমরা সেই নবীজির করা ভবিষৎবাণী হিন্দের যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ছাড়া আমরা ঠিকভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যোগাযোগ করতে পারি না। তাই যোগাযোগ ও ইন্টারনেট বিষয়েই এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি দেওয়া হলো এবং সাথে নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু তথ্য। এতে যা যা থাকছে-
১। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া ও চালু করা আবার স্লো করে দেওয়া কারন কি? কিভাবে করে? ২। ফেসবুক, টেলিগ্রাম কিভাবে চালাবো যেখানে এগুলো সবাই ব্যবহার করার কারণে সরকার এগুলোকে ব্লক করে রাখছে বা ধীর গতি করে রাখছে? ৩। ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও অন্যান্য মিডিয়া চালানোতে কিভাবে নিরাপত্তা রক্ষা করবো?
১ নং প্রশ্নের উত্তরঃ
————————
(১। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া ও চালু করা আবার স্লো করে দেওয়া কারন কি? কিভাবে করে?)
ইন্টারনেট হচ্ছে এমন একটি নেটওয়ার্ক যেখানে পৃথিবীর সব নেটওয়ার্ক একসাথে যুক্ত হয় এবং এর ফলেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে সহজেই যোগাযোগ করা যায়। সহজে বললে কারেন্ট লাইনের মত এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেভাবে তাঁর দিয়ে বিদ্যুৎ নিয়ে দূরে বাতি জ্বালানো যায় সেরকম। আবার সেই মাঝে যখন কোন সুইচ রাখে তা দিয়ে অন অফ করতে পারে সহজে ঠিক সেভাবেই ইন্টারনেটেও এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ততে এরকম অন অফ সিস্টেম রাখা রয়েছে। বলতে গেলে অনেক গুলো ধাপ। যেমন ধরেন বাসায় কোন বাচ্চাকে মোবাইল ধরতে দেওয়া হলো না, তাহলে সে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারলো না, আবার মোবাইল হাতে পেয়ে গেলেও বাসার রাউটার বন্ধ করে দিলেও আবার ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারবে না। রাউটার এর অ্যাক্সেস পেল, কিন্তু তাঁর উপর লেভেলের আইএসপি(ইন্টারনেট সারভিস প্রভাইডার) ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলে তখন আবার ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারবে না। এভাবে আইএসপি এর উপরে আবার বড় আইএসপি থাকে যেমন সামিট কমিউনিকেশন, ফাইবার এটম যারা পাইকারী ভাবে ইন্টারনেট (ব্যান্ডউইথ) সাপ্লাই দিয়ে থাকে। তারা যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে আইএসপি কোম্পানিগুলোও ইন্টারনেট আর নিচের লেভেলে সাপ্লাই দিতে পারবে না। এরপর আসে তাঁর চেয়েও বড় দেশীয় পর্যায়ের সুইচিং লেভেল। যার নাম বিটিআরসি। একটা দেশের মূল ইন্টারনেট সরকার কন্ট্রোল করে এরকম একটা প্রতিষ্ঠান দিয়ে যেখান থেকে সব জায়গায় ইন্টারনেট কানেক্ট/সাপ্লাই হয়। এখানে যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে সামিট কমিউনিকেশন ও ফাইবার এটম এর মত ইন্টারনেট এর পাইকারী বিক্রেতারা পর্যন্ত রাস্তায় বসে যায়। সারা দেশের কেউ কোনভাবে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করতে পারবে না যদি সরকার তথা বিটিআরসি থেকে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। গত সপ্তাহে যে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল সেটা মুলত সরকারই করেছিল তথা বিটিআরসি। তারা বন্ধ করে দেওয়ায় সামিট, ফাইবার এটম ও অন্যান্য বড় কোম্পানিতে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় আর তারা নিচের লেভেল তথা সারা দেশের বিভিন্ন আইএসপিতে আর ইন্টারনেট সাপ্লাই দিতে পারে না, আর আইএসপি নিচে সাপ্লাই দেওয়া তো তখন অসম্ভব।
বর্তমানে সরকারই তথা বিটিআরসি যেটি সরকারের ইন্টারনেট অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সংস্থা তারাই নেট স্লো করে রেখেছে। যেটাকে ব্যান্ডউইথ বলা হয় তা সাপ্লাই কমিয়ে দিয়েছে তাই এক ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে সারা দেশে। এখন ফেসবুক বন্ধ, টেলিগ্রাম স্লো করা, বন্ধ করা এগুলো কে করছে? এগুলোও একদম উপর লেভেলই করছে অর্থাৎ সরকার। ইন্টারনেট এর অ্যাক্সেস কমিয়ে দেওয়ার জন্য যেকোনো আইপি ব্লক করে বা কান্ট্রি ব্লক করা যায়। তাই আগুন লেগে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়া, ধংস হয়ে যাওয়া এগুলো একদমই মিথ্যা কথা। ইন্টারনেটের মত ঠিক মোবাইল নেটওয়ার্কও কন্ট্রোল করে সরকার। কোন বেসরকারি সংস্থা এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাই সরকার চাইলে দিনে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করতে পারে এবং (ব্যান্ডউইথ কমিয়ে) স্লোও করে দিতে পারে। এখানে তাঁর নিচের লেভেলের আইএসপি কোম্পানিগুলোর কিছুই করার থাকে না। এই হলো বাংলাদেশের ইন্টারনেটের কাহিনী।
২ নং প্রশ্নের উত্তরঃ
————————
(২। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম কিভাবে চালাবো যেখানে এগুলো সবাই ব্যবহার করার কারণে এগুলোকে ব্লক করে রাখছে বা ধীর গতি করে রাখছে?)
তাগুত সরকার ও তাঁর অভিশপ্ত বাহিনী, কর্মকর্তারা সব সময়ই সাধারণ জনগণের উপর উপর জুলুম করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে তারা সব রকম ভাবে তা রোধ করার চেষ্টা করে। আর তারই অংশ হচ্ছে যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া। ইন্টারনেট দিয়েছে স্লো তার উপর আবার যেগুলো তাদের জন্য হুমকি হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই ফেসবুক এর আইপি অ্যাক্সেস বন্ধ করে রেখেছে। সাথে এখন টেলিগ্রামেরও। এগুলো চালাতে হলে দরকার ভিপিএন বা প্রক্সি। এগুলো বাহিরের দেশের কিংবা বাহিরের একটি নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে বাইপাস করে এই ব্লক করা আইপিগুলোতে অ্যাক্সেস দেয়।
ফেসবুক চলছে না, টেলিগ্রাম চলছে না। তাহলে তার ভিপিএন বা প্রক্সি ইউজ করতে হবে। এগুলোও এক ধরণের অ্যাপ এর মাধ্যমে সহজেই ব্যবহার করা যায়।
ভিপিএন/VPN
ভিপিএন দুই ধরণের পাওয়া যায়। একটা ফ্রি আরেকটা কিনতে হয়। ফ্রি ভিপিএন গুলোতে কিছু লিমিটেশন থাকে, অ্যাড দেখায়, সময় লিমিট করে দেয়, এছাড়া ইন্টারনেট আরো ধীর গতি করে দেয়, কিন্তু যে সাইট ব্লক করা সেটি দেখতে দেয়। আর যেসকল ভিপিএন কিনতে হয় সেগুলোতে এরকম কোন লিমিট থাকে না। আর বর্তমানে এইসব কিনতে পারা যায় ভিপিএন গুলো মোডিফাই করা ভার্সন অনলাইনে পাওয়া যায় যা ফ্রি এবং দ্রুত গতিতে চলে। সেগুলো ইউজ করা যায় এবং গুগলে সার্চ দিলে সেগুলো পাওয়া যায় সহজেই। অসংখ অ্যাপ রয়েছে ভিপিএন এর জন্য তার মধ্যে কিছু ভিপিএন এর নাম-
Turbo VPN, Proton VPN, UltraSurf VPN, Cyberghost VPN, Touch VPN, 1111 VPN, soloVPN, Hola VPN, VPN.lat IPgate VPN ইত্যাদি আরও অনেক রয়েছে।
এগুলো ৩ ভাবে পাওয়া যায়- FREE, PAID, MODED/MODIFIED Version.
Modify version হলো যেগুলো কিনতে হতো তা ফ্রিতে পাওয়া। তাই উপরের যেকোনো ভিপিএন এর নাম এর সাথে mod লিখে সার্চ দিলেই সেগুলো পাওয়া যাবে। যেমন- turbo VPN mod apk download
তাহলেই চলে আসবে। আর আমি টেলিগ্রামেও কিছু দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো ভিপিএন। অনেক সময় কোন ভিপিএন সার্ভিস বন্ধও হয়ে যায় তখন আবার নতুন ভার্সন বা অন্য কোন ভিপিএন অ্যাপ ইন্সটল করে কানেক্ট করলেই হবে।
ভিপিএন অ্যাপ ওপেন করে যেকোনো একটি কান্ট্রি তথা নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করতে হবে এবং কানেক্ট না হলে অন্য একটি কান্ট্রি বা নেটওয়ার্ক কানেক্ট করার চেষ্টা করতে হবে। এই অ্যাপ যতক্ষণ চালু থাকবে, ভিপিএন নেটওয়ার্ক চলতে থাকবে এবং ব্লক করা ফেসবুক, টেলিগ্রাম এগুলো চলবে।
VPN Downoad Link-
https://t.me/ANiK555_Mods/1337
https://t.me/ANiK555_Mods/1304
https://t.me/ANiK555_Mods/1285
https://t.me/ANiK555_Mods/1277
https://t.me/ANiK555_Mods/1190
প্রক্সি/Proxy
প্রক্সিও ভিপিএন এর মতই কাজ করে। টেলিগ্রাম অ্যাপে সরাসরি প্রক্সি সিস্টেম করা আছে, শুধু প্রক্সি সার্ভার অ্যাড্রেস, কোড ও আরও কিছু দরকারী পোর্ট বসাতে হয়। টেলিগ্রামে প্রক্সি বসিয়ে নিলে যে সুবিধা হবে তা হচ্ছে ভিপিএন এর মত এটা বারে বারে চালু করতে হবে না, টেলিগ্রামে ঢুকলে সহজেই অটো কানেক্ট হয়ে যাবে, ব্লক করলেও সারাদিন চালানো যাবে। এর জন্য সহজ একটি অ্যাপ আছে। নাম- Deeproxy । এটি গুগল প্লে স্টোরে সার্চ দিয়ে ডাউনলোড করুন। এরপর দেখবেন একটি লিস্ট এসেছে- তাতে এক পাশে বড় করে দেওয়া 95-99/100% ইত্যাদি আর ping : 230 ms / 300 ms এরকম। এই দুইটা খেয়াল করে সেখানে থাকে অনেকগুলো প্রক্সি থেকে যেটায় ping যত কম, সেটাতে কানেক্ট করার করলে ভালো ফাস্ট নেট পাওয়া যাবে। এটা কিভাবে করবেন খুব সহজেই এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে।
লিঙ্ক- https://www.youtube.com/watch?v=zyNthF2eYaQ
আরও কয়েকটি প্রক্সি একইভাবে টেলিগ্রামে কানেক্ট করে auto proxy swich অপশন চালু করে দিলে কোন প্রক্সিতে কানেক্টে সমস্যা হলেও অন্যটি চালু হয়ে যাবে। কলে কথা বলার allow proxy in call অন করে দিতে হবে যদি কল কানেক্ট হতে সমস্যা হয়। যদি দেখেন যে টেলিগ্রাম চলা আবার বন্ধ হয়েছে তাহলে আবারো এই DeeProxy অ্যাপে ঢুকে নতুন একটি কানেক্ট করে নেন। খুবই সহজ মাধ্যম এটা।
আশা করি এই দুই পদ্ধতিতে সবগুলো ব্লক করা সাইটই আপনারা চালাতে পারবেন। কোন ধরণের সমস্যা ছাড়াই।
৩ নং পরে দেওয়া হবে।