আপনাদের প্রচারিত আখিরুজ্জামান বইতে এবং অনলাইনে প্রচার করা কিছু হাদীসে বেলাল ইবনে বারাহ লেখা। অথচ সহীহ বর্ণনাতে ও সব জায়গায় বেলাল ইবনে রাবাহ লেখা পাওয়া যায়? আপনারা এটার ব্যাখ্যা বলেন। আর সাহেবে কিরণ এর নাম শামীম বারাহ দিয়েছেন এটাও কি ভুল?
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমাদের প্রকাশিত বই ‘আখীরুজ্জামান গবেষণা ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’ বইতে কিছু জায়গায় হাদিসে বেলাল ইবনে বারাহ লেখা পেয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে বেলাল রাঃ এর পিতার নাম রাবাহ ই। এটি একটি টাইপিং মিসটেক।
যেমন এই হাদিসটি-
এটি অনেক আগের অনলাইনে লেখা হাদিস যাতে অসংখ্য বানান ভুল পরিলক্ষিত হচ্ছে। মূলত এখানেও নামের এই বানানে ভুল হয়েছে। অন্যান্য গুলো কারেকশন করা হলেও এই ভুলটি চোখে আসে নি। এখন এর সাথে এই প্রশ্নটিও আসে যে তাহলে শামীম বারাহ লেখা হয় সেটিও কি ভুল?
সঠিক হচ্ছেঃ
বেলাল ইবনু রাবাহ (রাঃ) এর বংশ, নাম শামীম ইবনে মুখলিস।
অন্যতম উপাধি নাম ‘বারাহ’। অর্থাৎ একটি নাম শামীম বারাহ। যেমন হাদিসে এসেছে-
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَخْرُجَ الْمَهْدِيُّ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي وَيَسِيرُ الْمُقَدَّسَ بِالْأَمَنِ ، وَلَا يَسِيرُ الْمَهْدِيُّ الْمُقَدَّسَ حَتَّى يَأْتِي شَمِيمٌ الْبَرَاحُ بِضِمَّتِهِ مِنَ الْقَوْمِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَإِنَّهُ لَحَقٌّ كَضَوْءِ الْيَوْمِ
বাংলা অনুবাদঃ হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, রসূল (সাঃ) বলেছেন, অবশ্যই আমার বংশের মাহদীর আগমনের পূর্বে কিয়ামত সংঘটিত হবেনা। আর সে নিরাপদে জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদ্দাসে ভ্রমন করবে। আর ততক্ষণ মাহদী জেরুজালেম ভ্রমন করবে না যতক্ষণ না অভিশপ্ত জাতি থেকে শামীম বারাহর দখলে আসে। আর অবশ্যই তা দিনের আলোর মত সত্য। (আখীরুজ্জামানুল মাহাদী ফি আলামাতিল কিয়ামাহ ৯৬, আবু নুয়াইম আল-ইসফাহানী)
আর বেলাল রাঃ এর পিতার নাম বা নামের অংশ হিসেবে শামীম বারাহ হয়নি। এভাবে নামের কোন অংশ থাকাও একটি অযৌক্তিক বিষয়। ভুলটি হয়েছিল, শামীম বারাহ নামটি লেখা হতো তখন বেলাল রাঃ এর পিতার নাম রাবাহ থেকে ভুলে বারাহ লেখা হয়ে যায়। এটিই টাইপিং মিসটেক হয়েছে। এবং যখন ছড়িয়ে গেছে তখন এটি তেমন খেয়াল করা হয়নি। দুইটি শব্দ ভিন্ন বানান ও উচ্চারণ এবং দুইটি শব্দের সাথে কোন ধরণের মিল নেই। বেলাল রাঃ এর পিতা ইসলামের যুগই পায়নি এবং এমন কোন নেককারও নয়, কিংবা কোন মর্যাদা যে তার নাম কারো নামের অংশে যুক্ত হবে। সুতরাং তার পিতার নাম দিয়ে কোন নামের অংশ হওয়া, উপাধি হওয়াও কোন যুক্তিতেই আসে না।
তাই আবারো সঠিকটি হচ্ছে-
* বিলাল ইবনু রাবাহ ( আরবি : بِلَال بن رَبَاح )
* শামীম বারাহ (شَمِيم الْبَرَاح)।
দেখতে উচ্চারনে কাছাকাছি হলেও ভিন্ন শব্দ। যেমন ভুল হয় রিকসা থেকে রিসকা। যেসকল জায়গায় এই ভুল হয়েছে তা ইতিমধ্যে অনেকটাই সংশোধন করা হয়েছে। আখীরুজ্জামান গবেষণা ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বইটি আবারো ছাপা হলে তাতে এই ভুলটি ঠিক করে দেওয়া হবে ইনশা আল্লাহ।
বিঃ দ্রঃ কিছু লোক এই সকল ভুলকে এমন ভুল হিসেবে উল্লেখ করে উপস্থাপন করে যে এটি খুবই মারাত্মক কোন বিষয়। আদতে এসকল ভুল হওয়া আহামরি কোন বিষয় নয়। মূল বিষয়টি ছিল বেলাল রাঃ এর বংশের উল্লেখ করা, যাতে কোন ভুল নেই। বানান ভুল হয়েছে বেলাল রাঃ এর পিতার নামে যেখানে তার নামে ভুল বা সঠিক হওয়া মৌলিক কিছু পার্থক্য করে না। অনেক লেখকের লেখা বইতেও এরকম বানান ভুল, অক্ষর আগে পিছে ভুল পাওয়া যায়। যেমন সাহাবীদের জীবনীগ্রন্থ আলোর মিছিল বইয়ের ৩ নং খণ্ডে বেলাল ইবনে বারাহ ভুলে লেখা হয়েছে। এটা যে টাইপিং মিস্টেক তা সহজেই বুঝা যায় কারণ এক জায়গায় এটি ভুল হয়েছে, অন্য জায়গায় তা ঠিক আছে।
আখীরুজ্জামানা গবেষণা ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বইতে বেলাল (রাঃ) অনেক জায়গায় ব্যবহার হয়েছে, তবে যেখানে পিতার নাম সহ এসেছে সেখানে রাবাহ এর বদলে বারাহ লেখা হয়েছে।
অতঃপর, বানান সঠিক হচ্ছে-
হযরত ফিরোজ দায়লামী (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আখেরী জামানায় ইমাম মাহদীর পূর্বে ইমাম মাহমুদ এর প্রকাশ ঘটবে। সে বড় যুদ্ধের শক্তির যোগান দিবে। তাঁর জামানায় মহাযুদ্ধের (৩য় বিশ্বযুদ্ধে) বজ্রাঘাতে (আনবিক অস্ত্রে) বিশ্বের অধ্বঃপতন হবে এবং বিশ্ব এই সময়ে ফিরে আসবে (অর্থাৎ আধুনিকতা ধ্বংস হয়ে প্রাচীন যুগে ফিরবে)। সে তাঁর সহচর বন্ধুকে (সাহেবে কিরান শামীম বারাহকে) সাথে নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করবে, যে বেলাল ইবনে রাবাহ-এর বংশোদ্ভুত হবে। তোমরা তাদের পেলে জানবে ইমাম মাহদীর প্রকাশের সময় হয়েছে।
– (আসরে যুহরি ১৮৭ পৃঃ; তারিখে দিমাশাক ২৩৩ পৃঃ; ইলমে তাছাউফ ১৩০ পৃঃ; ইলমে রাজেন ৩১৩ পৃঃ; বিহারুল আনোয়ার ১১৭ পৃঃ)
হযরত হাম্মাম (রহিঃ) বলেন, আমি আবু হুরাইরা (রা:) কে বলতে শুনেছি কেয়ামত সংঘটিত হবেই। অবশ্যই অবশ্যই তার পূর্বে খলীফা মাহাদীর প্রকাশ ঘটবে। তবে তারও পূর্বে এক সৌভাগ্যবান ব্যক্তির প্রকাশ হবে। যার নাম হবে শামীম ইবন্ মূখলিস। সে হবে পিতার দিক থেকে বিলাল ইবনে রাবাহ (হাবশী) এর বংশধর। আর মায়ের দিক হতে খলীফা আবু বকরের (কুরাঈশী) বংশধর। অবশ্যই সে একজন ইমামের (মাহমুদ) সহচর হবে।
– (ইলা উম্মাতি মুহাম্মাদিন জামানুন ফিতানা ১০৩; জামানুন আখীরা আল খুলাফা, ইমাম হাজিম রহি, ৭৮; এবং কিতাবুল আকিবেও এই হাদিসটি রয়েছে)
হযরত বিলাল ইবনে রাবাহ (রা:) বলেন, রসূল ﷺ বলেছেনঃ হিন্দুস্তান মুসলমানরা শাসন করবে। আবার তা মুশরিকরা দখল করবে এবং তারাই সেখানে তাদের সকল হুকুম প্রতিষ্ঠা করবে। আবার তা মুসলমানরা বিজয় করবে যাদের নেতা হবে মাহমুদ এবং সেখানে আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তা ইসা ইবনে মরিয়ম (আ.) পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কিন্তু লা’নত ইহুদিদের প্রতি। একথা বলে তিনি (রসূল ﷺ) রাগান্নিত হয়ে গেলেন। তার চেহারায় রক্তিম চিহ্ন প্রকাশ পেল। সাহাবীগণ তাদের কন্ঠ নিচু করে বললেন, হে আল্লাহর রসূল সেখানে ইহুদিদের কর্ম কী? তিনি বললেন, অভিশপ্ত জাতিরা মাহমুদের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করবে এবং সেখানকার একটি অঞ্চল তাদের দখলে নেবে। সাহাবীগণ বললেন, তখন কী তারা (মুসলমানরা) অভিশপ্ত জাতিদের মোকাবেলা করবে না? তিনি বললেন, হ্যাঁ করবে। আর তাদের সাহায্য করবে বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেমের) একজন বাদশা।
– (আস সুনানু কিতাবুল ফিরদাউস ১৭০৮; কিতাবুল আক্বিব ১৩৮)
বুঝতে পেরেছি